Tuesday, July 25, 2023

মনের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশকে যা বন্ধ করে দেয় তাই অনিষ্টকর

মানুষের মন মানেই সেই মানুষটা, মন বাদ দিলে সে শুধু রক্ত মাংসের দেহ বিশিষ্ট এক প্রকার উন্নত প্রাণী মাত্র। আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন আমার ঘুম ভাংতো বাংলাদেশ বেতারের প্রভাতি অনুষ্ঠানের গান শুনে। আমার বাবা প্রচুর গান শুনতেন। সেই গানের সুর এখনও যখন শুনতে পাই তখন মনটা নেচে উঠে। মানুষের মন বলতে তো আসলে ছোটবেলা থেকে গড়ে উঠা কতগুলো ধারণার সমষ্টিকে বুঝায় আর আমাদের ইন্দ্রিয় গুলোর ভাল মন্দ বুঝার একটা স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। যে জিনিস গুলো জিহ্বায় বিস্বাদ লাগে তা যেমন আমরা অনিষ্টকর বুঝতে পারি তেমনি মনে যা আনন্দ দেয় না তা অনিষ্টকর হওয়াটাই স্বাভাবিক। যখন আপনি মনের এই স্বাভাবিক বিচারকে বুদ্ধি দিয়ে নাকচ করে তার উপর কার বলা কথা চাপিয়ে দেন তখন তা হয়ে যায় অস্বাভাবিক ও অনিষ্টকর। যখন কেউ আমার মনের কথা কাইরা নিতে চায় কিংবা কথায় কথায় শিকল পড়ায় তাদের আমি মনের অনেক গভীর থেকে ঘৃণা করি। আমি কৈশোরে যখন খুব মন খারাপ করে থাকতাম তখন আমার এক বন্ধু রিপন বলতো, মনটা তো আমার এটাকে আমি ভাল রাখব কি রাখব না সেটা আমার উপরই নির্ভর করে। ওর কথা তখন বুঝতাম না কিন্তু এখন বুঝি। ওকে আজীবনই আমার কাছে চটপটে ও বুদ্ধিমান মনে হয়েছে আর ও ঠিক তাই। এখনও যখন বহুকাল পরে দেখা হয় তখন ওর চঞ্চলতা আর বুদ্ধির ছটা আমার চোখে ধরা পরে। খালেক ভাই নামে আরেকজন জুনিয়র ফ্রেন্ডকে কাছে টেনে নিয়েছি কারণ তার মধ্যে ঘটমান বাস্তবতা নিয়ে যে প্রাণচঞ্চল মন্তব্য গুলো শুনি তখন মনে হয় পৃথিবী আনন্দময়। পৃথিবীটা তখনই আনন্দময় হয় যখন আমরা মনকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিকশিত হতে দেই। মনের এই বিকাশকে বন্ধ করে দেয় যারা তারা মানবতার শত্রু বলে আমি মনে করি। বিধি নিষেধ আরোপ করা উচিত এক্সট্রিম পয়েন্টে, তার আগে নয়। কিছু কিছু বাবা মা তাদের ছোট সন্তানদের ডিভাইস ধরতে দেয় না, মানে মোবাইল কিংবা ট্যাব ধরতে দেয় না কিংবা ইন্টারনেটে যাতে বিপথগামী হতে না পারে তাতে পেরেন্টাল গাইডেন্স আরোপ করে। আমার সন্তানদের আমি তা করি নাই আর যে জিনিসটি আমি দেখেছি যে, বয়সের সাথে সাথে তাদের আগ্রহের দিকগুলোও ধরা যায়। তারা সেই সব জিনিসের প্রতিই আকৃষ্ট হয় যা তাদের শিশু মন আকর্ষণ বোধ করে। আমার বয়স্ক মন যাতে আনন্দ পায় তাদের মন তাতে আনন্দ পাবে না এটাই স্বাভাবিক তাই তাদের স্বাধীন ভাবে ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহারের পক্ষপাতী আমি। আমার তিন সন্তানের বয়সের ব্যবধান ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ মানে ৭ বছর আর পরের জনের মধ্যে ব্যবধান ২০০৬ থেকে ২০১৪ মানে ৮ বছর। ওদের তিন জনকে নিয়ে একটা মুভি দেখা সম্ভব ছিল কিছু কাল আগেও, তাতে তিন জনই মজা পেত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যা দেখলাম তিন জনের রুচি ও আনন্দ পাওয়ার প্রবণতা বদলে গেছে, এখন আর তিনজনকে নিয়ে এক মুভি দেখার উপায় নাই। আমি পিতা মাতার এক মাত্র সন্তান হওয়ায় আমি শৈশব থেকে কৈশোর ও যৌবনে পদার্পনে নানা ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করেছি তাই আমার সন্তানদের বড় হওয়ার প্রতিটি ধাপ আমি বুঝতে পারি। ওদের মা কে ওরা ভয় পায়, সে তাদের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে কিন্তু আমি ওদের ফ্রিডম দেই, ওদের স্বাভাবিক মন বিকাশের দিকে নজর রাখি ও স্পেস দেই। এই স্পেসে তারা ডাল পালা মেলে চমৎকার বড় হচ্ছে দেখে আমার মনে আন্ত তৃপ্তি আসে। ওদের মা এর শাসন আর আমার প্রতি শাসন দুটো মিলে যেন একটা ফুল প্রুফ প্লেন যার মধ্যে দিয়ে ওরা বড় হচ্ছে। যে সব বাবা মা তাদের সন্তানদের কেবল বিধি নিষেধের বেড়া জালে চালিত করে ভাবছেন ভাল কাজ করছেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনার শিশুর স্বাভাবিক মন বিকাশকে রুদ্ধ করবেন না। শাসন করুন তবে যতটুকু দরকার তার বেশি নয় আর তাদের মন বিকাশের একটি স্পেস দিন এরং তা যেন পর্যাপ্ত হয় সে দিকে খেয়াল রাখুন। 

শৈশব থেকে শিশু মনে ভাল মন্দের ধারনা, বিপদ ও বিপদ থেকে উদ্ধারের কৌশল, বাস্তবতার নানা প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে উপদেশ দেয়া বাবা মার কর্তব্যর মধ্যে পরে, তার পর আসে তাদের মন বিকাশের দিকটা, এখানে তাদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন না হলে মন বিকশিত হবে কোথা থেকে। এটা শুধু শিশুদের বিষয় নয়, আমি মনে করি সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এমনকি বৃদ্ধ কিংবা প্রউড় মানুষ গুলোর সমস্যা আরো বেশী। জীবন যত বাড়ে ততই জটিলতা বাড়ে কিন্তু তার মাঝেও তাদের মনের জন্য সময় ঠিকই বের করে নিতে হয়। মানুষের মানবিক প্রশান্তি যাকে আত্মতৃপ্তি বা ইনার পিস বলা হয় তা অর্জন করাই প্রাথমিক লক্ষ্য হতে দেখা যায়। কেউ কেউ তার সন্তানকে বিদেশে পড়তে পাঠাতে পেরে এই আত্মতৃপ্তি পায় আবার কেউ কেউ সন্তানকে বিয়ে দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত দেখে আনন্দ পায়। এমন পিতা আছেন যে সন্তান দাড়ি রেখেছে ও নামাজী হয়েছে দেখে আনন্দ পায় যার বিপরীতটাও ঘটতে দেখা গেছে।

প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আজাদ তার নারী গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের অবতরণিকায় লিখেছেন “আমরা আজ আছি প্রথা, মধ্য যুগ ও তার নির্মম বিধি বিধানের মধ্যে। আমি প্রথা বিরোধী; প্রথা মানুষকে পশুর স্তরে আটকে রাখে, বিকশিত হতে দেয় না; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নিরন্তর বিকশিত হওয়াই মনুষ্যত্ব। প্রচণ্ড ভাবে প্রথার প্রত্যাবর্তন ঘটান হচ্ছে পৃথিবী জুরে; প্রথার পক্ষে কথা বললে এখন অজস্র মুকুট মেলে, -------- তবে মানুষ প্রথার মধ্যে বাচতে পারে না, পশুও পারে না। প্রথা চিরজীবী নয়, কোন প্রথা হাজার বছর ধরে চলে এসেছে বলেই তা শাশ্বত নয়; কোন প্রথা মহাকাশ থেকে নামেনি, পুরষতন্ত্রই সৃষ্টি করেছে সমস্ত প্রথা। তবে প্রথার স্বেচ্ছা মৃত্যু ঘটে না, প্রগতিশীল মানুষেরাই অবসান ঘটায় প্রথার। পৃথিবীতে কিছুই শাশ্বত চিরকালীন নয়। পৃথিবী টিকে থাকবে আরো কয়েক কোটি বছর, প্রথা আর পঞ্চাশ বছরও হয়তো টিকবে না; এক শতাব্দী পর উত্তরপুরুষদের আমাদের সমস্ত বিশ্বাসকে মনে হবে হাস্যকর অপ বিশ্বাস।” বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই কয়েকদিন আগেই যখন আমি জানতাম না তিনি এ কথা গুলো লিখে গেছেন, আমার ছোট বেলার বন্ধু বিপুল আর জুনিয়র ফ্রেন্ড খালেক ভাইকে বলছিলাম কয়েক শতক পর বা ৩৬৩৫ সালে সাইবার্গ যুগের মানুষ গুলো হাস্যরস করে বলবে একদা অতীতে লোকজন ধর্মের মোহে অন্ধ হয়ে পড়ে থাকতো। আমিও আজ প্রথার বিরুদ্ধে চলে গেছি তা হুমায়ুন আজাদ এর কথা গুলো জানার আগেই আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা, গবেষণা আর আত্ম জিজ্ঞাসা থেকেই আমি সেখানে পৌঁছেছি।

বেশ কয়েক বছর আগে সচিবালয় বা সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং গুলোর চৌহদ্দির মধ্যের মসজিদে নামাজ পড়ে যখন বের হচ্ছি তখন দেখলাম এক হুজুর বাচ্চাদের পড়াচ্ছে, হাতে তার বেত, কথায় কথায় বাচ্চাদের মারছে সেই বেত দিয়ে। আমার মা আমাকে পড়াতেন হাতে হাত পাখা নিয়ে, মনোযোগ অন্য দিকে গেলেই বাড়ি খেতাম সেই হত পাখার। অনেক আগে সেটাই ছিল রীতি, পড় না পড়লে বেতের বাড়ি খাও। আমাদের স্কুলে স্যারেরা হাতে রুলার দিয়ে বাড়ি দিত। এখনকার সময়ে সেই চল উঠে গেছে। আমার মা যতই মেরেছে ততই আমার জেদ চাপতও পড়া না পড়ার প্রতি। এভাবে বেতের বাড়ি দিয়ে পড়ান এখন আর নাই। আমার তিন সন্তানের কাউকেই আমাকে বেতের সাহায্য নিয়ে পড়াতে হয় নাই। তারা ভালই পড়ছে ও শিখছে। জ্ঞান অর্জনটা হবে স্বতঃস্ফূর্ত। মিচিও কাকুর বই ফিজিক্স অব ইম্পসিবল এ ইংল্যান্ডের অবিস্মরণীয় বিঞ্জানী মাইকেল ফেরাডের কথা পড়লাম। তিনি জন্মেছিলেন এক দরিদ্র শ্রমিক পরিবারে। চুম্বকের বল রেখার বিষয়ে তার ছিল অসম্ভব আগ্রহ, সেই সূত্র ধরেই সে হামফ্রে লেভির বক্তৃতা শুনতে যেত, পরে হামফ্রে লেভির একটা পা এর অসুস্থতায় তার ল্যাবরেটরিতে সহকারীর কাজ পায়। পরে মাইকেল ফেরাডের উন্নতি দেখে হামফ্রে লেভি তাকে হিংসা করতো। হামফ্রে লেভির মৃত্যুর পর এই অসাধারণ প্রতিভা ইলেক্ট্রো-মেগনেটিজমের বহু সূত্র আবিষ্কার করেন, এমনকি জেনারেটরের আবিষ্কারও তার হাতে। মজার ব্যাপার হলো তিনি অংক জানতেন না, তার খাতা ভরা থাকতো ডায়াগ্রামে। এখনো সেই ডায়াগ্রাম গুলো পদার্থ বিদ্যার বইয়ে স্থান পায়। আইনেষ্টাইন তার আকা ডায়াগ্রাম গুলো ব্যবহার করেছেন এমনকি মিচিও কাকুও তার স্ট্রিং থিউরির গবেষণায় সেই ডায়াগ্রামগুলোও ব্যবহার করেছেন। তাই বলা যায় বেতের বাড়ি দিয়ে শিক্ষা প্রদান মানব মনের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। যার মেধা আছে তার প্রচেষ্টা থাকবেই আর সে প্রস্ফুটিত হবেই। এটাই প্রকৃতিরই একটা নিয়ম।

আমার একটি আত্ম প্রবাদ আছে যা আমি নিজেই নিজেকে বলি “What a happy mind can do a sad mind can’t” যখন কোন কাজে প্রচুর বাধা আসে তখন এই প্রবাদটি স্মরণ করে আগে মনকে ভাল করে নেই। উৎফুল্লতা আর প্রাণবন্ততা না থাকলে যে কাজেই হাত দেন না কেন তা থেকে ভাল ফল আসার কথা না। যাতে মন সায় দেয় না তা করতে গেলে দেখবেন নানা রকম ভাবে মন চলতে চাচ্ছে না। সামান্য প্রতিবন্ধকতাকে অনেক বড় মনে হচ্ছে আর এর ঠিক বিপরীতটা দেখা যায় যখন মন যা চায় তাই করতে থাকা। মানুষের মন কখন সখন নিন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, যা করছে তো করছেই থামতে চায় না, নেশাগ্রস্থ হয়ে সেই কাজটাই করতে থাকে। আরো আছে অভ্যাসের দাসে পরিণত হওয়ার প্রবণতা। এই জায়গাটাতেই বলা হয় নিজের মন কে শাসন করতে। Govern your passion or it will govern you প্রবাদটি এ জন্যই বলা হয়ে থাকে। কথা সত্য যে, মনকে উদাম ছেড়ে দিলে তা যথেচ্ছাচার করতে পারে সেক্ষেত্রে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ খুব দরকার তবে তা হতে হবে নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ অন্য কার বা কিছুর নয়। আমি পরীক্ষামূলক ভাবে ছাত্র জীবনে একবার আর বয়স্ক জীবনে একবার মদ বা এলকোহল খেয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। ছাত্র থাকা অবস্থায় আমার এক বন্ধু সবে আর্মিতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে সে আমাকে ঢাকা কলেজের উল্টা দিকে গ্যালাক্সি বারে নিয়ে গিয়েছিল। ওখানে যাওয়ার পর দুই কি তিন পেগ বিয়ার খেয়ে আমার কিছুই হলো না কিন্তু ও মাতাল হয়ে গেল। পরে ওকে ধরে ধরে বাসার দিকে রওনা করে দিতে হয়েছিল। এর পর বয়সকালে চাকুরী জীবনে ভাল ভাবে পরীক্ষা করে দেখার উদ্দেশ্যে বিয়ার, হুইস্কি, ভদকা এগুলো ট্রাই করে দেখলাম কয়েকদিন করে, অবাক ব্যাপার হলো আমার কোনটাই ভাল লাগে নাই এবং আমি তেমন মাতালও হই নাই। অবশ্য যে মাতাল হয় সে নিজে তা বুঝতে পারে না। যেহেতু অন্য কেউ এর উপস্থিতিতে আমি ওগুলো খাই নাই তাই আমার বিচারটা সঠিক হওয়ার কথা না। হ্যাঁ একটু তো রিলেক্সক্ড লেগেছে। আমি সাধারণত রাতে সব কাজ শেষে কোয়ালিটি টাইম পাসের জন্য  মিউজিক ভিজুয়ালাইজেশন দিয়ে নানা রং এর আলোকচ্ছটা উপভোগ করতে করতে চা ও সিগার খেতাম আর নানা চিন্তায় মগ্ন হতে থাকতাম। ওই জায়গায় চা এর পরিবর্তে বিয়ার, হুইস্কি কিংবা ভদকা ট্রাই করে দেখেছিলাম কয়েকদিন যদি তাতে আরো উপভোগ্য লাগে কি না তা যাচাই করে দেখতে। আমার চা এর প্রতি নেশা এতটাই বেশি যে একে একে হুইস্কি, ভোদকা, এগুল বাদ হয়ে কেবল বিয়ার রইলো তা’ও পরে আর তেমন ভাল লাগল না। তার চেয়ে বরং চা’ই বেশি ভাল লেগেছে যা এখনও আমি চালিয়ে যাচ্ছি। ছাত্র জীবনে আমি বিদেশী তামাকের মিকচার দিয়ে সিগার বানায়ে খেতাম, আমার জানা ছিল না যে মিকচার মানুষ গাজার সাথে মিশায়ে খাওয়ার জন্য বেশি পছন্দ করে। ছাত্র জীবনে গাজার গ কই পাওয়া যায় তাও জানতাম না। কিছু দিন আগে একটা সোর্স থেকে গাজা পেলাম, এবার বিদেশী তামাক মিক্সচার এর সাথে মিলায়ে পরীক্ষামূলক ভাবে খেয়ে দেখলাম তাতে আমার যা হলো তা বলাই বাহুল্য। নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাতে আমার ভাল লাগে না। গাজা বা কথ্য ভাষায় যাকে হুইট বলে তা চেষ্টা করে দেখা গেল তা আমার নিজের উপর, মানে নিজের চিন্তা ভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বা তাকে অকেজো করে দিতে চায়। আমার কখনও মাথা ব্যথা করে না কিন্তু গাজা খেয়ে দেখলাম তা আমাকে বাধ্য করে আমার চিন্তা ভাবনা গুলোকে ব্লার বা ঝাপসা করে দিতে। তার পর ঘুমায়ে যাওয়া ছাড়া আর পথ খোলা থাকে না। আমি ভেবে পাই না মানুষ কেন এই সব নেশা করে। আমি চা মিশৃত কফি বা ক্যাফেইন আর সিগারেটের নিকোটিনে আসক্ত তা বেশ কড়া মাত্রায় কিন্তু মদ কিংবা গাজা আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। পারে নি কারণ আমি আমার মনের উপর আমার নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাতে চাইনি অন্য কারো কাছে বা অন্য কিছুর কাছে। অন্যরা এই সব নেশাতে কেন মজা পায় তা মনে হয় এখন আমি বুঝি। তারা খানিক সময়ের জন্য তাদের অপছন্দের বাস্তবতা থেকে ভিন্ন দুনিয়ায় বেহুশ হয়ে থাকতে চায়। আমার যেহেতু আমার বাস্তবতাটা পছন্দের আর কোন দুঃখকে মনে স্থায়ী আবেগে পরিণত হতে দেই না তাই আমি ওদের কারণটাতে মজা পাই না। চা এর প্রতি আমার অতিরিক্ত নেশার কারণটা আমি মনে হয় এখন বুঝে গেছি। আমি ছোট বেলায় ডেয়ারি মিল্ক চকলেট খুব পছন্দ করতাম, কোকোর সাথে দুধ মিলালে যে স্বাদটা পাওয়া যায় তা ওই চকলেটেও পাওয়া যায়। আমার বাবা মা দাতে পোকা হবে ভয় দেখায়ে আমাকে কোন চকলেটই খেতে দিত না ছোট বেলায় । ওই অবদমিত প্রত্যাশাটা মনের গভীরে প্রথিত ছিল তাই যখন বড় হয়েছি তখন তা চা-কফি-কনডেন্সড মিল্ক মিশ্রিত করলে সেই কোকো আর দুধ মিশ্রিত চকলেটের স্বাদ দেয় তার সাথে নিকোটিন যুক্ত হলে তো কথাই নাই। তাই চা ই আমার কাছে তৃপ্তিদায়ক পানিয়, মদ নয় তেমনি সিগারেট এর তামাক পাতার ধোয়া চাইতে গাজার ধোয়া আমার কাছে বেশি তৃপ্তি দায়ক মনে হয়নি। তার চেয়ে ইন্দোনেশিয়া বা কোরিয়ার এ্যাপল ফ্লেভারড মন্ড নামক চিকন সিগারেট যাতে মাত্র 0.25% নিকোটিন তাই আমার কাছে পছন্দনীয়। ভ্যাপ বা ইলেকট্রনিক সিগার খাওয়ার চেষ্টা করেও দেখেছি। তা আমার ভাল লাগে না। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আর প্রফুল্লতাকে আমি মনে করি সতেজ মন। ইনার পিস বা আত্ম তৃপ্তিই মানব মনের একান্ত প্রত্যাশা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবদমিত মন কিংবা অসন্তুষ্ট মন থেকে কোন ভাল কিছু আশা করাটা বোকামি। মন থেকেই মনু বা মানুষ, মনটাকে বাদ দিলে আমি আপনি রক্ত মাংসের একটা হিংস্র পশু কিংবা নিরামিষ প্রাণী ছাড়া আর কিছুই নই।

কলকাতার নচিকেতা এতদিনে কিংবদন্তি হয়ে গেছে বলা যায়, তার ধারার গান একটা নতুন বা ইউনিক ধারার সৃষ্টি করেছে বাংলা গানে যা অন্য কার গলায় ভাল লাগে না। তার গান শুনলেই বুঝা যায় এটা নচিকেতা। তার একটা গান হলো, “যখন সময় থমকে দাড়ায়, নিরাশার পাখি দু হাত বাড়ায়, খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোন কি আর করে তখন? স্বপ্ন, স্ব-প্ন, স্ব-প্ন! ---স্বপ্ন দেখে মন”। কার কার ক্ষেত্রে তা দুঃস্বপ্ন হয়ে যায় আর এরাই বাস্তবতা থেকে পলায়ন করে নেশার আশ্রয় নেয়।তাই বলছিলাম মনের স্বাধীন চালনা বলতে একটা ভুল বুঝার সম্ভাবনা রয়েছে আর তা হলো মনে যা আসলো আমরা যদি তাই করি তবে তা যথেচ্ছাচার হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে আমার মনটাকে বা আমার মেধার যুক্তি কাঠামোকে আমি কি দিয়ে কালচার করেছি, গোবর দিয়ে কালচার করলে ফলন ভাল হবে কিন্তু তা আপনাকে দিক্বিদিক অন্ধকার পথে নিয়ে যেতে পারে। যদি আপনি জ্ঞানের সার ব্যবহার করেন ও কোন একটা সংস্কৃতির আওতায় তাকে গড়ে তুলেন তবে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। এখানে বলে রাখি কালচার বা সংস্কৃতির এক কথায় প্রকাশ হলো, এক গুচ্ছ মানুষের সাধারণ জীবনাচরণ যা একটি সমাজ গঠন করে থাকে। ইংরেজিতে বলা যায় A common lifestyle shared by a group of people which formed a society. সমাজ আগে না কালচার আগে সেটা বুঝতে হবে। গঠিত সমাজেই সাংস্কৃতিক চর্চা চলে যার মানে হলো আগে সমাজকে গঠন হতে হবে। সমাজ হলো কতক লোকের মধ্যে আন্ত লেনদেনের সর্বজন স্বীকৃত সমঝোতা যা একটি মুরুব্বি মহল কর্তৃক সংরক্ষিত। এই সর্বজন স্বীকৃত সমঝোতা থেকেই সাধারণ জীবনাচরণ উঠে আসে আর তার স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত আত্মপ্রকাশই সেই সমাজের সংস্কৃতি। সমাজ ভেদে জাতী ভেদে দেশ ভেদে তাই সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। আজকের এই গ্লোবাল ভিলেজে সংস্কৃতির বিশ্বায়ন হয়ে গেছে। ধীরে হলেও বিশ্ব জোড়া একটা সাধারণ সংস্কৃতি সৃষ্টি হচ্ছে। অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইনফরমেশন হাইওয়ে ধরে দেশ ও সমাজ সব একাকার হয়ে যাচ্ছে তবে মোটা দাগে আরবান কালচার আর সাবআরব কালচারকে পৃথক করা যায় এখনও।

যে মন কোন বিধি নিষেধে আবদ্ধ হয়ে চলে কিংবা ধর্মীয় প্রথা বা অনুশাসনের কিংবা কুসংস্কার দ্বারা অবদমিত তাকে আমরা বদ্ধ মন বলি আর তা থেকে মুক্ত যে মন তারাই মুক্ত মনা। এই সব মুক্তমনা মানুষেরাই প্রগতিশীল ও যে কোন বাধ ভেঙ্গে সামনে অগ্রসর হতে জানে। শিকল পড়া ছল মোদের এই শিকল পড়া ছল, এই শিকল পড়েই তোদের মোরা করব রে বিকল, কথাগুলো গানে নজরুল এমনি এমনি বলেন নাই। কুসংস্কারের মাত্রা এত বেশি আর এত পৌরাণিক যা না শুনলে বুঝা যাবে না। একটা কুসংস্কারে এরকম মনে করা হয় যে বৃহষ্পিতি বাদে সপ্তাহের যে কোন তিন দিন প্রচুর লবণ পানি দিয়ে ঘর মুছলে আর সদর দরজার দুই কোনায় লবণ রেখে দিলে নাকি অর্থাগমনের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ রকম বিশ্বাস কোন পাগল ছারা কার মাথায় আসার কথা না, সেই পাগল সাধু সন্ন্যাসী বলে কোন কোন সমাজে সম্মানিত ও তাদের কথা মানুষজন মান্য করে। এর চেয়ে হাস্যকর ও বিস্ময়কর কথা আর কি হতে পারে।

এনএসইউ’র বা নর্থ সাউথ ইউনিভারসিটির এক দল তরুণী ও একজন তরুণ সিঁড়িতে বসে গিটার নিয়ে গান গাইছে, তাও আবার আঞ্চলিক একটা গান যার বাংলা অনুবাদটি গেয়ে শুনাল ছেলেটি। এই ভিডিও ক্লিপটি আমার কলেজ গ্রুপে শেয়ার করায় এক পিএইচডি করা বন্ধর মন্তব্য ছিল অশ্লীলতার জন্য ওখানে ফ্যাকাল্টি খোলা হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো পিএইচডি করা এই বন্ধুটিকে আমার স্রেফ বকলম মনে হলো তার বিষয় ছাড়া অন্য বিষয় গুলোতে। সে সংষ্কৃত মনা তো নয়ই বরং অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় কালচারে নিজের মনকে জোর করে আবিষ্ট করে রেখেছে বলে আমার ধারণা। আমি তাকে মনে করায়ে দিয়েছি যে, আমরা যে দেশে বসবাস করি তা সেকুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যার নাম গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যার একটা সংবিধান আছে। আর সে জেন সংবিধানের বিরুদ্ধে কোন কথা না বলে। সংস্কৃতি প্রবাহমন নদীর মত, সম্মিলিত মনের স্বতঃস্ফূর্ত আত্মপ্রকাশ কে যে বাধা দিতে আসবে সে স্রোতের তোড়ে উড়ে যাবে। সংস্কৃতির শক্তি অনেক বেশি। আমার ছোট বেলার বন্ধু বিপুলকে বলছিলাম সেদিন যে, আমরা নিজেরা আমাদের সাধারণ বিচার বোধ দিয়েই একদল বানরের মধ্যে কোন বানর গুলো ভাল আচার পালন করছে তা বলে দিতে পারি আর স্রষ্টা যদি থেকেই থাকে তার পক্ষে তা যাচাই করা আরও সহজ। কোন একটা বই পাঠায়ে একটা ধর্মের ভিত্তিতে তাকে তা করতে হবে কেন ? আমি ধর্মীয় প্রথায় বিশ্বাস থেকে সরে গেছি তাই বলে অন্যকে সরতে বলছি না কিন্তু ধর্মের অনুশাসন গুলো পুরাতন আর তা বর্তমানের মানবিক আচরণগুলোকে ভুল ভাবে বিচার ও ব্যাখ্যা করে মানুষের মনকে বিধি নিষেধের আওতায় বাধতে চায়। এটা ভেবে দেখে না যে, সেই মানুষটার এই প্রথা মানার ইচ্ছা আছে কি নাই। তারা মনে করে এটা তাদের ভালর জন্যই কিন্তু আমি বলবো তা যদি আপনার পছন্দ না হয় তবে আপনি তাতে নিমজ্জিত হলে তা থেকে ভাল ফল আসার কোন সম্ভাবনাই নাই। অবদমিত মন কখন ফলন দিতে পারে না। তরতাজা মন এর কালচার করুন দেখবেন পৃথিবীটা কত সুন্দর।

এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ২৮ জুন২০২৩> ১৫জুলাই২০২৩ > ২৩ জুলাই২০২৩ >২৬ জুলাই ২০২৩ > ০৯জানুয়ারী২০২৪>

No comments:

Post a Comment